আজ || শনিবার, ০৩ Jun ২০২৩
শিরোনাম :
 


তালার গৃহবধূ রত্নাকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করে ৩য় স্বামী সবুজ

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের অসীম সাধুর বাড়িতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী ভাড়াটিয়া ফারহানা আক্তার রত্নাকে তার বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান সবুজই পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

সোমবার (৯ মার্চ) সকাল ১০টায় সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান প্রেস ব্রিফিং করে আদালতে দেওয়া হাসিবুর রহমান সবুজের ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

হাসিবুর রহমান সবুজ ফারহানা আক্তার রত্নার বর্তমান ও তৃতীয় স্বামী এবং কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলার খাসমথুরাপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে।

এছাড়া অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণকারী ফারহানা আক্তার রত্না খুলনার পাইকগাছা উপজেলার মালোত গ্রামের রোকনউদ্দিন সরদারের মেয়ে।

পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, রত্না তার দ্বিতীয় স্বামী খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চারাবটতলা এলাকার মিজানুর রহমানের সঙ্গে তালাক হয়ে যাওয়ার পর পাইকগাছা আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলা চলাকালে কপিলমুনির মাহমুদকাটিতে রত্নার বিউটি পার্লারে হাসিবুরের পরিচয় হয়।

হাসিবুর নিজেকে মেরিকো বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে পরিচয় দেয়। সেখান থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ও ২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর তারা বিয়ে করে।

হাসিবুরের বাড়িতে রত্নাকে মেনে না নেওয়ায় তারা তালা উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের অসীম সাধুর ভাড়া বাড়িতে ৮ নভেম্বর থেকে বসবাস শুরু করে।

বাপের বাড়ি থেকে দেওয়া লক্ষাধিক টাকা নিয়ে সাবেক স্বামী মিজানুর রহমান শেখ ব্যবসা করায় রত্নার সহ্য হচ্ছিল না।

এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রত্না তার তৃতীয় স্বামী হাসিবুরকে বলে। এজন্য মিজানকে র‌্যাব দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া বা পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলতো। এ নিয়ে রত্না ও সবুজের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।

এমন এক পরিস্থিতিতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি হাসিবুর রহমান সবুজ তার স্ত্রীর সাবেক স্বামী মিজানুরের দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য জনৈক কবীর হোসেন নামের এক ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালককে নিয়ে তালা বাজার থেকে একটি প্লাস্টিক কন্টিনারে করে তিন লিটার পেট্রোল নিয়ে আসে। অন্য এক দোকান থেকে নিয়ে আসে দু’টি প্লাস্টিক টিউব। এরপর থেকে অস্থির হয়ে ওঠে রত্না। সবুজ বাইরে চলে যায়।

একপর্যায়ে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত একটার দিকে সবুজ ঘরে ফিরে আসে। তখন রত্না নিজের ঘরে পেট্রোল ছড়িয়ে সারা ঘর জ্বালিয়ে দিতে চায়। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে টেবিলের উপরে থাকা দিয়াশলাই নিয়ে ঘরে আগুন দিয়ে বারান্দায় চলে যায় সবুজ। এতে রত্না ও ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যেতে শুরু করলে সবুজ দোতলায় উঠে গৃহকর্তাকে ডেকে আনে।

সবুজ ঘটনার জন্য দায়ী নয় প্রমাণ করতে রত্নাকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় প্রথমে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় রত্নাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে নিয়ে ঘর করবে এমন আশ্বাস দিয়ে হাসপাতালের ডাক্তারদের ম্যানেজ করে সবুজ সাবেক স্বামীসহ চারজন ঘরে আগুন দিয়েছে এমন জবানবন্দি গ্রহণ করানোর চেষ্টা করে।

এর আগে শ্বশুর রোকনউদ্দিনকে বুঝিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তালা থানায় মিজানুর রহমান শেখ, তার ভাই মোমিনুর রহমান শেখ, দোকান কর্মচারী হেলাল ও ভগ্নিপতি আব্দুল গফুরের নামে মামলা করায় সবুজ।

৪ মার্চ সকালে ঢাকা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রত্না। তদন্তকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালা থানার পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার আলী শেখ মোবারকপুরের ভাড়া বাসার সামনে থেকে সবুজকে গ্রেফতার করেন।

পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, আদালতে আবেদন করে হাসিবুর রহমান সবুজকে এ মামলায় গ্রেফতারের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে এজাহারভুক্তরা নির্দোষ হওয়ায় তাদেরকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। #


Top