আজ || বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
শিরোনাম :
 

নদী খননে শম্ভুক গতি::


একদিকে “হোম কোয়ারেন্টাইন অপর দিকে ওয়াটার লক” দিশেহারা সালতা পাড়ের মানুষ

সালতা নদী খননে ধীরগতি

সারা দুনিয়াকে স্তব্ধ করে দিয়েছে মহামারি করোনা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশেও হানা দিয়েছে করোনা ভাইরাস। ঘর বন্ধি সকল শ্রেণী পেশার মানুষ। নিম্ন আয়ের মানুষ ছুটছে ত্রানের খোঁজে। ঘরে বসে চাপা কান্নায় দিন কাটাচ্ছে নিম্ম ও মধ্যে বিত্তরা। এমন পরিস্থিতিতে ঘোর অন্ধকার দেখছে তারা। ঘরের খাবার কারো শেষ, কারো শেষ হবার হওয়ায় উপক্রম। হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ শ্রেনির মানুষ। লোকলজ্জায় চাওয়ার অভ্যাস না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে দেখা গেছে তাদের। মুখ ফুটে বলতে পারছে না তাদের অসুবিধার কথা। দেশের এমন পরিস্থিতে দ্বিমুখী সমস্যায় চরম বিপাকে পড়েছে সালতা পাড়ের মানুষ।

খুলনার পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবিকার প্রাণ এক সময়ের খর¯্রােতা নদী সালতা ক্রমান্বয়ে নাব্যতা হ্রাসে পরিণত হয়েছে মরা খালে। সালথার নতুন করে প্রাণ ফেরাতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলনে বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার নজর দিয়েছে। শুরু হয়েছে সালথা খনন কার্যক্রম। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি থেকে শুরু করে নানা সংকটে খনন কার্যক্রম চলছে মন্থর গতিতে। প্যাকেজ প্রকল্পের আওতায় ভিন্ন ভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আওতায় বাস্তবায়নাধীন নদী খননে দেওয়া হয়েছে আলাদা আলাদা বাঁধ। তবে বাঁধ দিলেও কাজের মন্থর গতি বেকায়দায় ফেলেছে দু’জেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া সালথা উপকুলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের। গত বছর মৎস্য চাষ মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে বাঁধ দিয়ে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমেও শেষ করতে পারেনি কাজ। আর ঐ সময়ে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় পুরনো মাছ মারা যায়নি, বর্তমান আবার পানির অভাবে প্রস্তুত করা যায়নি কোন মৎস্য ঘের। সমস্যার শুরু মূলত এখান থেকেই। চাষ মৌসুম  পেরিয়ে গেলেও গোটা বিলাঞ্চল জলাবদ্ধ থাকায় বীজতলা থেকে শুরু করে ক্ষেত প্রস্তুত করতে পারেনি কৃষকরা। অন্যদিকে বীজতলা ও ক্ষেত প্রস্তুত করতে না পারায় আশাতীত ইরি-বোরো আবাদ হয়নি। চিত্রামারী, গজালিয়া, খোরেরাবাদ, বৈঠাহারা, মাদারতলা সহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানির অভাবে মরুভূমিতে পরিনত হয়েছে। প্রান্তিক চাষিরা ঘেরের ভেড়ী বাঁধ প্রস্তুত করে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কিন্তু পানির দেখা মিলছে না। কবে মিলবে তাও কেউ জানে না। দু’একজন উচ্চ মূল্যে পোনা ছেড়ে শ্যালো বোরিং এর মাধ্যমে ঘেরে পানির ব্যবস্থা করলেও তা কাজে আসছে না প্রখর রোদে শুকিয়ে যাওয়ায় সে চেষ্টাও ব্যার্থ ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোরেরাবাদ গ্রামের অসংখ্যাক নারী-পূরুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। লক্ষন মন্ডল ঘেরে শেওলা বাছার কাজ করে চলে তার সংসার। এমন পরিস্থিতিতে সে অসহায়ের মতো জীবন যাপন করছে। করেনার কারন তো আছেই তা ছাড়া সালতা নদী খনন করা কাজ চলার কারণে বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ না করায় মরু অঞ্চলে পরিনত হওয়ায় কোন ঘেরে যেতে পারছে না কাজ করতে। সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে পড়তে হচ্ছে তাকে।

চিত্রামারী  গ্রামের একজন  প্রান্তিক ঘের ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। চলতি মৌসুমে এলাকায় জল উঠা বন্ধ থাকায় আমাদের সংসার চলছে না বললেই চলে। এমন পর্যায়ে আমরা বলতেও পারছি না, সইতেও পারছি না। কারোর কাছে কিছু চাইতে পারছি না লোকলজ্জার ভয়ে। অন্যান্য বছর গুলিতে আমরা এ সময়ের মধ্যে ২/৩ কিন্তি মাছ ধরার সুযোগ পাই। বিক্রি লব্ধ টাকা দিয়ে পোনার টাকা পরিশোধ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন হাট বাজার করার কোন উপায় নাই।

বৈঠাহারা গ্রামের ক্ষুদ্র চিংড়ি চাষি জানান, সালতা নদী খনন কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ জানে না। দু’পাড়ের শত সহ¯্র মানুষ চরম বিপাকে আছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ৩/৪টি স্কেভেটর নিয়ে শম্ভুক গতিতে খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইচ্ছা মাফিক। নদী বাঁচাতে গিয়ে কৃষক মারা যাচ্ছে তা কেউ দেখছে না। একদিকে “হোম কোয়ারেন্টাইন অপর দিকে ওয়াটার লক” এর কবলে দিশেহারা আমরা।

স্থানীয়রা জানান, হাতিটানা নদীর মাধ্যমে এসব এলাকায় পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা যেত তবে পল্লীশ্রী স্কুলের পিছনের বাঁধ থাকায়, চিলা নদী ভরাট হওয়ায়, দু’ ইউনিয়নের মানুষের ও জনপ্রতিনিধিদের সম্বনয়হীনতার অভাবে সে প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখছে না। এলাকাবাসীর ধারনা, দ্রুততার সাথে সালতা নদী খনন কাজ এগিয়ে নিলে সমস্যার সমাধান হবে। আর তা  না হলে দ্বিমুখী সমস্যায় চরম খেশারত দিতে হবে সালতা পাড়ের মানুষের ।


Top