১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়া সুপার সাইক্লোন আম্ফানের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। এই ঘূর্ণিঝড়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ১৬ জন।
আম্ফানের তাণ্ডবে ২২ হাজার ৫১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ৬০ হাজার ৯১৬টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । সব মিলিয়ে এই ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় ক্ষতির পরিমাণ ৩ শতাধিক কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (২১ মে) রাতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আম্ফানের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংকালে জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল এসব তথ্য জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে প্রবল জোয়ারে জেলার কপোতাক্ষ ও খোলপেলটুয়া নদীর অন্তত ২০ পয়েন্ট ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ও মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ৫৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও এলজিইডির ৮১ কিলোমিটার রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সাতক্ষীরায় ৬৫ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ৪০ হাজার টাকার আমসহ ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকার কৃষি সম্পদ । এর মধ্যে ৬২ কোটি ১৬ লাখ টাকার সবজি, ১০ কোটি ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকার পান ও সাড়ে ৪ লাখ টাকার তিল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৮৭০।
ঝড়ে ৯১টি খামার ও ৬৪০টি গবাদি পশুসহ ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৩০ টাকার এবং ৮৬টি হাঁস মুরগির খামারসহ ৭৭ লাখ টাকা ৬৭ হাজার ৮৬ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে সাড়ে ১২ হাজার মৎস্য (চিংড়িসহ) ঘের। যার ক্ষতির পরিমাণ ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা টাকা।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘সাতক্ষীরার আমের একটা সুখ্যাতি আছে এবং এখানে প্রচুর আম হয়। ঝড়ে ফলন্ত গাছের আম, যা পাড়ার অপেক্ষায় ছিলেন চাষিরা, তার প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ ঝরে পড়েছে। এছাড়া অন্যান্য শাক-সবজিরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবার ঘর্ণিঝড় পূর্বাভাস পাওয়ার পরপরই জেলার ১৯০৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে আনার সাথে সাথে প্রায় ৩০ হাজার গবাদি পশুকে নিরাপদে সরিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় প্রাণি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পূর্ব প্রস্তুতির কারণে আম্ফানের মতো প্রবল শক্তিসম্পন্ন একটি ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরায় প্রাণহানির সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা গেছে। ঝড়ে হাজার হাজার গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এর সাথে সাথে ঘরবাড়িও সেই হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাধ এবং যেসব পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গেছে সেসব জায়গায় মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঝড়ের পূর্বেই জেলায় ২৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এবং নতুন করে আরও ৩৭৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. বদিউজ্জামান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.নুরুল ইসলাম ও জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.মশিউর রহমান ।